
বাউবির ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন : “সার্টিফিকেট নয়, দক্ষ মানবসম্পদ গড়াই বাউবির লক্ষ্য” — বাউবি উপাচার্য
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২৫ আজ ২১ অক্টোবর, মঙ্গলবার গাজীপুর ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর ও আনন্দঘন পরিবেশে পালিত হয়েছে। দিনব্যাপী নানা বর্ণাঢ্য কর্মসূচি ও অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করা হয়।
সকাল ৯টায় জাতীয় পতাকা ও বাউবি পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম। তাঁর সঙ্গে প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন, প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, পরিচালক, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে শান্তির প্রতীক সাদা পায়রা ও রঙিন বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
পতাকা উত্তোলন শেষে উপাচার্যের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত স্মারক “জুলাই জাগরণী”-তে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ডসহ শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অংশগ্রহণে এক বর্ণাঢ্য আনন্দ র্যালি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে।
এরপর কেন্দ্রীয় সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়: দ্যুতিময় এক বছর’ শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন ও আলোচনা সভা। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম। উপাচার্য তাঁর বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. এম. শমসের আলী ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বলেন, “বাউবি প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য হলো অবহেলিত ও কর্মজীবী জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া। এখন আমরা সেই লক্ষ্য পূরণের পথে আরও দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছি।” তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় কেবল সার্টিফিকেট বিতরণের কেন্দ্র নয়, এটি জ্ঞান ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির প্রতিষ্ঠান।” তিনি আরও জানান, সেশনজট নিরসন, নকলমুক্ত পরীক্ষার পরিবেশ, ফলাফল ও নাম সংশোধন প্রক্রিয়ার গতি বৃদ্ধি এবং প্রশাসনিক কাঠামোয় গতিশীলতা আনতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানযোগ্য করে তুলতে নতুন দক্ষতাভিত্তিক প্রোগ্রাম চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন প্রয়াত অধ্যাপক সমসের আলীর অবদান স্মরণ করে বলেন, “বাউবি পরিবার আন্তরিকতা ও সহযোগিতার মাধ্যমে একটি ইতিবাচক পরিবেশ গড়ে তুলেছে, যা ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্বমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।”
বিশেষ অতিথি হিসেবে প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস পিএইচডি বলেন, “গর্বের পাশাপাশি আত্মসমালোচনাও উন্নয়নের অন্যতম চালিকা শক্তি। দায়িত্ববোধ ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে বাউবিকে আরও এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।”
সভাপতির বক্তব্যে ট্রেজারার অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মোহাঃ শামীম বলেন, “কর্মজীবী ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যেই বাউবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দক্ষতানির্ভর ও ভোকেশনাল শিক্ষার প্রসারে বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।” তিনি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সফল করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
স্বাগত বক্তব্যে রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক মোঃ আনিছুর রহমান বলেন, “প্রশাসনিক কাঠামোর পুনর্বিন্যাস ও জনবলের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে বাউবির কার্যক্রম আরও গতিশীল হয়েছে। পরীক্ষায় নকলমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ায় একাডেমিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে।”
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন তথ্য ও গণসংযোগ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জনাব মোঃ খালেকুজ্জামান খান।
একইসঙ্গে দেশের সকল আঞ্চলিক এবং উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্রেও পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২৫ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়।
-প্রেস রিলিজ